গত কয়েকদিন যাবত হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে জাজিরা উপজেলার জিরো পয়েন্টে বেশকিছু বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর আগে ভেঙেছে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চেয়ারম্যান স্টেশন বাজার। গত তিন দিন যাবত নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নে। এরই মধ্যে গতকাল এবং আজ কে চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর এলাকায় ৭৮ বছর আগে ১৯৪২ প্রতিষ্ঠা ৮১নং বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি একতলা ভবন ও একটি দোতলা ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ভাঙ্গনরোধে শুরু থেকেই ভাঙ্গন কবলিত এসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে খেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ। পদ্মা নদীতে পানির প্রবল স্রোত থাকায় শত চেষ্টা করেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আজও শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নে অব্যাহত রয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর এলাকায় কয়েকদিন যাবত শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন। এক সপ্তাহের ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় এক হাজার বাড়িঘর। সেই সাথে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৮১নং বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ৭৮ বছর আগে১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ ৮১নং বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আজ পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন। আজ বৃহস্পতিবার ১১ টার সময় ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট দ্বিতীয় ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৩৭৫ জন কোমলমতি শিশুর শিক্ষা জীবন।
গত এক বছর যাবত নীরব থাকা পদ্মা আবার দেখাচষল তার আগ্রাসী রূপ। গতকাল দুপুরে মানুষের চোখের সামনে পদ্মার প্রবল স্রোতের তোড়ে মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৮১ নং বসাকেরচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা বিশিষ্ট স্কুল ভবনটি। আজ দ্বিতীয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় বসাকের চর এলাকার একমাত্র বিদ্যাপীঠ এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হলো।এছাড়া বিরতিহীন ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে ইতিমধ্যে ওই এলাকার ৪টি মসজিদ, একটি নুরানী মাদ্রাসাসহ জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
প্রত্যক্ষদশীরা ডাঃ তৌহিদ মুন্সী জানান, অনেক দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বসাকের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট দ্বিতীয় ভবনটি ভেঙে নিয়ে গেল সর্বনাশ আগ্রাসী পদ্মা। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো কষ্টকর। গত কালকের মত আজও চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে নদী গর্ভে চলে গেল দ্বিতীয় ভবনটি। গত কয়েকদিনের নদী ভাঙণে প্রায় ৫০০ বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙণ কবলিত এসব মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখনে। এদিকে ভাঙ্গন শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি মহোদয়ের নির্দেশে ভাঙণ প্রবণ এলাকায় ভাঙ্গন রোধে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব জানান, উজানের পানি নামতে শুরু করার পর থেকেই পদ্মা বেষ্টিত জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার নদী তীরবর্তি এলকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। বিলীন হওয়া স্কুলটি দীর্ঘ ৭৮ বছর আগে হাজার ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল দুপুরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এই বিদ্যালয়ের একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন এবং আজ সাড়ে এগারোটার দিকে দ্বিতল বিশিষ্ট সর্বশেষ ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ভাঙ্গনরোধে শুরু থেকেই আমাদের ভালো ব্যক্তি যে অবহেলা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এখানে পানির স্রোত বেশী হওয়ায় পানির তোরে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ সরে যাচ্ছে। বস্তায় কোন কাজ হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা অব্যাহত আছে। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী স্যারের নির্দেশে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই দিনরাত ভাঙ্গন এলাকায় থেকে ভাঙ্গনরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ দিকে স্রোতের তোরে আজ চরাত্রা ইউনিয়নের বসাকের চরের নতুন ৯টি সহ প্রায় ৫৫টির মত বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও এ যাবত জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বড়কান্দি ও নাওডোবা ইউনিয়নের ৫০০ টি ও নড়িয়া উপজেলার চরাত্রা ইইনিয়নের ৫৫ টি বসত বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, পদ্মার প্রবল স্রোতে গতকাল চরাত্রা ইউনিয়নের বসাকেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা একটি ও দুই তলা পাকা ভবন পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৩০ গজ দুরত্বে থাকা অন্য দ্বিতল ভবনটিও রয়েছে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে। এছাড়াও আজ বসাকেরচরের ৫০টি বসত বাড়ি নদিগর্ভে চলেগেছে। ভাঙ্গন কবলিতদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, পদ্মার স্রোত বাড়ার সাথে সাথে আমরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্কুল ভবনটি দুই টি রক্ষার জন্য জিওব্যাগ ডাম্পিং করেও শেষ রক্ষা হলো না। তবে ঝুঁকির বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করা ছিল। বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার পর ওই সকল শিক্ষার্থীদের পড়া-শোনা চালু রাখার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত কাজ চলছে। ওই সকল পরিবারগুলোকে ঘর নির্মানের জন্য ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।