ঢাকা, রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হাদিসে কুদসির পরিচয় ও মর্যাদা জেনে নিন

‘কুদস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে – পবিত্র, যা দোষ-ক্রটি থেকে মুক্ত। এটা আল্লাহ তায়ালার ‘আসমাউল হুসনা’ বা গুনবাচক নাম সমূহের একটি নাম।

হাদিসে কুদসির সংজ্ঞা

 

যে হাদীসের মূল কথা সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে, সেই হাদীসকেই‘হাদীসে ক্বুদসী’ বলা হয়।

ব্যখ্যা

আল্লাহ তায়ালার যেই কথাগুলো কোরআনের ‘আয়াত’ হিসেবে নাজিল করা হয়নি বরং, আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নের মাধ্যমে অথবা তার অন্তরে ‘ইলহাম’ করে পাঠিয়েছেন, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কথাগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজ ভাষায় উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন, সেইগুলোকে হাদীসে কুদসি বলা হয়।

 

নামকরণ

যেহেতু এই হাদিসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, তাই এগুলোকে ‘হাদীসে কুদসী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

হাদীসে কুদসীর কথাগুলো আল্লাহর, কিন্তু তার ভাষা বা বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে। অপরদিকে, কোরআনের আয়াতগুলোর কথা এবং ভাষা – সমস্তটাই স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার।

হাদীসে কুদসী চেনার উপায়

হাদীসে কুদসীগুলো বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনে মাজাহসহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

হাদীসে কুদসী চেনার উপায় হচ্ছে, এই হাদীসগুলোতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এইভাবে বলেন, “আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, বলেন বা বলবেন”।

হাদিসে কুদসির মর্যাদা

হাদিসবিশারদদের মতে, হাদিসে কুদসির মর্যাদা কোরআন ও সুন্নাহর মধ্যবর্তী। অর্থাৎ মর্যাদার বিচারে হাদিসে কুদসির অবস্থান কোরআনের পরে এবং সুন্নাহর ওপরে। কেননা কোরআনে শব্দ ও বাক্য উভয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর সুন্নাহর শব্দ ও বাক্য উভয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে। অন্যদিকে হাদিসে কুদসির শব্দ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ আর তার অর্থ ও মর্ম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। (তাইসিরু মুসতালাহুল হাদিস, পৃষ্ঠা-১২৮)

একটি বিখ্যাত ‘সহীহ’ হাদিসে কুদসি

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহ আযযা ওয়া-যাল কিয়ামতের দিন বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি।”

মানুষ তখন বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি হচ্ছেন সারা জাহানের পালনকর্তা?”

তখন আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?”

(আল্লাহ আরো বলবেন) “হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি।”

মানুষ তখন বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে খাবার দেব, আপনি তো হচ্ছেন সারা জাহানের প্রভু?”

তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে?”

(আল্লাহ আরো বলবেন) “হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি।”

বান্দা বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে পানি পান করাবো, আপনি তো হচ্ছেন সমগ্র জগতের পালনকর্তা?’

তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমাকে কাছে পেতে?”

(সহীহ মুসলিমঃ ২৫৬৯; মুসনাদে আহমাদঃ ৮৯৮৯। রিয়াদুস সালেহীন, অধ্যায়ঃ ৭/ রোগীদর্শন ও জানাযায় অংশগ্রহণ, হাদীস নং-৯০১)


error: Content is protected !!