ঢাকা, রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গবেষণায় আলোকবর্তিকা ড. ফিরদৌসী কাদরী

বাংলাদেশের চিকিৎসা গবেষণায় আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করছেন আইসিডিডিআর,বির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. ফিরদৌসী কাদরী। ইতোমধ্যেই গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য অবদানস্বরূপ অর্জন করে নিয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২৩), যা নারী বিজ্ঞানীদের জন্য একটি অনন্য মাইলফলক। ড. কাদরীর এই অর্জন তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১৭ মে) দুপুরে আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ড. ফিরদৌসী কাদরীর স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ অর্জন উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও আইসিডিডিআর,বি বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। পরে ড. কাদরীর কর্মজীবনের ওপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও এবং দীর্ঘকাল ধরে ড. কাদরীর সঙ্গে কাজ করা বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের পাঠানো ভিডিও বার্তা দেখানো হয়।

 

ড. কাদরীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, এই উদযাপন অনুষ্ঠান শুধু ড. কাদরীর চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জীবন রক্ষাকারী কাজের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নয়, বরং বিজ্ঞানে নারীদের অগ্রগামী করার প্রতিশ্রুতির গুরুত্ব মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

এসময় তিনি বাংলাদেশ এবং বিশ্বের জনগণের স্বাস্থ্য ও এলানাথে উচ্চ-মানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উদ্ভাবনের প্রতি আইসিডিডিআর, বির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর অ্যাডওয়ার্ড টি রায়ান বলেন, গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ড. কাদরীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তিনি সত্যিকার অর্থে প্রকৃতির এক শুভ শক্তি।

এসময় ওয়েলকাম সেন্সার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিকোলাস রবার্ট থমসন এবং আইসিডিডিআর,বির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা গ্রুপের সদস্য তার বার্তায় বলেন, অবহেলিত অনেক রোগের বিষয়ে ড. কাদরী আমাদের সতর্ক করেছেন। তিনি না থাকলে এ রোগগুলো উপেক্ষিত থেকে যেত।

ড. কাদরীকে অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ড. কাদরীর কৃতিত্ব উদযাপনের পাশাপাশি বিজ্ঞানের রূপান্তরকারী শক্তি এবং এই ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন আজ। বর্তমান সরকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে এবং প্রতিটি সেক্টরে নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অভিনন্দনে সিক্ত ড. কাদরী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই ভালোবাসাই তার কাজের চালিকা শক্তি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সহকর্মীরাও ড. কাদরীর সঙ্গে তাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং শুভেচ্ছা জানান। আইসিডিডিআর,বির ডিরেক্টর অব ফাইন্যান্স থমাস লিয়াম বারি অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. ফিরদৌসী কাদরীর হাতে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন। এছাড়া বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ড. কাদরী বহু পুরস্কার পেয়েছেন, যা বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানকে প্রতিফলিত করে। তিনি ২০২১ সালে ‘এশিয়ার নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে খ্যাত মর্যাদাপূর্ণ র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হন। লারিয়েল-ইউনেস্কো ফর উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড – ২০২০ তাকে বিজ্ঞানে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০২০ সালে বিল গেটস ড. কাদরীকে মহামারি (কলেরা) প্রতিরোধের নায়ক (হিরো) হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এসকল সম্মাননা ছাড়াও তিনি আরও অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন। যেমন- ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স থেকে প্রফেসর সিএনআররাও প্রাইজ, ক্রিস্টোফার এবং রডলফ ম্যায়াক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ২০১২ এবং জীববিজ্ঞানে অসামান্য গবেষণার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির স্বর্ণপদক, ২০০৬।


error: Content is protected !!