ঢাকা, রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, রবিবার, ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অবশেষে সেই নাছিমার কাছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ক্ষমা প্রার্থনা

চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ফি জমা দিলেও ফরম পূরণ হয়নি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাছিমার। পরীক্ষার দুই দিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশপত্র না আসায় বিষয়টি জানাজানি হয়। পরবর্তীতে আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি নাছিমা। এ ঘটনায় নাছিমা উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

এদিকে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলার পর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগী নাছিমা ও তার স্বজনদের ডেকে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।

 

মঙ্গলবার (২৩ মে) ভুক্তভোগী নাছিমা ও মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল মান্নান  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার সোলাইমানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার আলোচিত এই ঘটনাটি নিয়ে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল  একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। নাছিমার অভিযোগ ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভেদরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম জাহাঙ্গীর আলম গত ১৬ মে অফিস আদেশ হিসেবে একটি চিঠির মাধ্যমে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল মান্নানকে ওই শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আলাদাভাবে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে নির্দেশ দেন।

মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল মান্নান  বলেন, আমি চিঠি পাওয়ার পরই বিষয়টি মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটিসহ সকলকে জানিয়েছি। নাছিমা ও তার মা-বাবাকে ডেকে মাদরাসায় এনে আমাদের ভুলের জন্য মাদরাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি নাছিমা ও তার পরিবারের কাছে যৌথভাবে ক্ষমা চেয়েছি। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক টিউলিজ রহমান কলি ক্ষমা চেয়েছেন কিনা তা আমি বলতে পারব না। বুধবার (২৪ মে) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রদত্ত চিঠির জবাব তার অফিসে গিয়ে জমা দেওয়া হবে।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক টিউলিজ রহমান কলির মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ সময় তিনি এই প্রতিবেদককে মাদরাসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ভুক্তভোগী নাছিমা  বলেন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আমাকেসহ আমার পরিবারকে মাদরাসায় খবর দিয়ে নিয়ে ফরম পূরণ না হওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আগামী বছর যেন আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি সেই ব্যবস্থা করবেন বলে কথা দিয়েছেন।

নাছিমার মা রাহিমা বেগম  বলেন, এলাকার মুরব্বিরা ডেকে নিয়েছেন। তারা তো মেয়ের শিক্ষক। আমরা গরিব মানুষ। ক্ষমা না করে কী করব! তারা বলেছে, মেয়ের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে যে খরচ হবে তা তারা দিয়ে দেবেন। আমরা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বড় মিয়া  বলেন, শিক্ষকরা শিক্ষা অফিসের চিঠি পাওয়ার পর নাছিমাকে ডেকে মাদরাসায় আনার পর আমাকেও খবর দিয়েছিল। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ভুল হয়েছে মর্মে তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। ক্ষমা চাওয়ার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে নিয়ে বড় বিপদে আছি। তার জন্য মাদরাসা পরিচালনায়ও সমস্যা হচ্ছে। আমি সব বিষয় শিক্ষা অফিসারকে খুলে বলব।

এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ না হওয়ার বিষয়টি গুরুতর। আমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলেছি। তারা ক্ষমা চেয়েছে আর ভুক্তভোগী ক্ষমা করে দিয়েছে বিষয়টি এখানে কোনোভাবেই শেষ নয়। এর পেছনে আরও কারণ থাকতে পারে। আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশনা দিয়েছেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে। আমি বিধি অনুযায়ী কাজ করবো।


error: Content is protected !!