
মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এ সুযোগে চরাঞ্চলের কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন সবজি ও ফসল ফলাতে। কৃষকেরা বালু মাটিতেই ফলাচ্ছেন সোনার ফসল।
কয়েকমাস আগেও থৈ থৈ পানিতে নিমজ্জিত ছিল চর অঞ্চলগুলো। তবে মাদারীপুর সদরের বিভিন্ন উপজেলায় শীতের শুরুতে পানি শুকিয়ে এসেছে চরের মাঠঘাট। একরের পর একর জমিতে এখন সবুজের হাতছানি। মাঠে মাঠে কাজের ব্যস্ততা বেড়েছ কৃষকের।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার ও কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা, মরিচ, শিম, বেগুন, গম, মিষ্টি আলু, সরিষা, লালশাক, ধনিয়াপাতা, কাচা মরিচ, লাউ, সবজি, ডাল ও কুমড়াসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করছেন চাষিরা।
হোগলপাতিয়ার গ্রামের কৃষক এনামুল আকন জানান, তিনি ৫০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে বেগুন ও মিষ্টি-কুমড়া চাষ করেছেন। কিছু বিক্রি করে বিনিয়োগের টাকা উঠে এসেছে। এখন যা কিছু আছে সব লাভের অংশ। সর্বমোট ৬ হাজার বিনিয়োগ করে এখান থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে তার।
আলিনগর চরাঞ্চলের কৃষক লতিফ আকন ও সিরাজুল ফকির বলেন, এক যুগ আগেও এ চরে কোনো ফসল চাষ করা যেত না। পানিতে ডুবে থাকত। শুষ্ক মৌসুমেও পতিত থাকতো এসব জমি। এখানে শুধু কাশবন বেড়ে উঠতো। সেই কাশবন কেটে এখানে এখন আমরা বিভিন্ন সবজি চাষ করি। এই ফসল ও সবজি আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস। এখন আমরা শুষ্ক মৌসুমেই দুই বার ফসল ঘরে তুলি।
কৃষক ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ২ হাজার টাকা ঋণের ওপর আনছিলাম পিঁয়াজ লাগানো জন্য। আল্লাহর দয়ায় ভালো ফসল হয়েছে। এখন আর কষ্ট থাকবে না। ফসলের দিকে তাকালেই মন জুড়িয়ে যায়।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা কৃষি কার্যালয়ের সহায়তায় ঝাউদি, আলিনগর, পাঁচখোলা, মহিষেরচর, হোগলপাতিয়া, মিয়ারহাট, আলিপুর,ডাসার, চলবল, নবগ্রাম, কালিকাপুর, বাংলাবাজার, মাদ্রা, খোয়াজপুর, মাইজপাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গত পাঁচ বছরে প্রায় দুই হাজার কৃষককে বিভিন্ন চাষাবাদের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, কৃষি বিভাগের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন ভালো ফলন পাচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এ বছর চরাঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। কীভাবে ভালো মানের ফসল বীজ থেকে পাওয়া যাবে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাদের।