
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: দশ বছর আগেও রিকসা চালিয়ে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের সফি কাজির মোড় মেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামের মরু মোল্লার ছেলে আসেদ চাঁন মোল্লা (৩০)। ঢাকা দোহার নূরুল্লাহ্পুর পাক দরবার শরীফে মরীদ হয়ে নাম পরিবর্তন করে নিজে পীর সেজে এখন নাম রেখেছেন ফকির হযরত শাহ্ আসেদ চাঁন ফকির পাগলা।
এক সময় তিনি দোচালা টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। এখন পীর হয়ে চিকিৎসা দেয়ার নামে তাবিজ কবজ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল দুটি মাজার শরীফ। সেই মাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে মুরিদানরা ও এলাকার কিছু খেটে খাওয়া স্বল্প শিক্ষিত সাধারণ লোকজন এসে আসেদ চাঁন ফকিরের পায়ে সেজদা দেয়। শুধু তাই নয় পীর হয়ে নারী-পুরুষদের নিয়ে রাত জেগে মাদক ও বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্য সেবন করে এবং নাচগান করে থাকে বলে জানিয়েন এলাকাবাসী। আসেদ চাঁন ফকিরের ইসলাম রিরোধী এসব কার্যকলাপের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এ ঘটনায় জাজিরা বিলাসপুর এলাকাবাসী গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জাজিরা উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে পীর আসেদ চাঁন ফকিরের আস্তানা উচ্ছেদ ও তার কার্যকলাপ বন্ধ করার দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবন্ধন করা হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে বিলাসপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার ব্যাপারী, মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রব হাশেমীর নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়। এসময় উপজেলা চত্ত¡রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। আসেদ চাঁন ফকির পাগলার মাজারে গিয়ে আসেদ চাঁনকে পাওয়া যায়নি।
আরো উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা সাইদুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান, কাওছার মাহমুদ, আব্দুল ওয়াদুদ, কামাল উদ্দিন, মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, মো. হালান মাহমুদ, কলেজ ছাত্র আল ইমরান, আল আমিন, কাজী মামুন, আরিফ আজিজ, সমাজ সেবক হাজী মোখলেছুর রহমান, আইনজীবী মো. মাসুদসহ সহস্রাধীক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, তথাকথিত ভন্ড পীর আসেদ চাঁন ফকির। তিনি কয়েক বছর আগে এলাকায় রিকসা চালিয়ে হকারি করে কাঁচামালের ব্যবসা করত। কিছু ভন্ড লোকের প্ররোচনায় প্রথমে ফকিরের বেশ, পরে ভন্ড পীর হয়েছেন তিনি। আস্তানা করে কিছু সহজ সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাবিজ, কবজের মাধ্যমে বষিভুত এবং তার পায়ে সেজদা করায়। উরশের নামে নারী-পুরুষদের দিয়ে রাতভর নাচানাচি করায়। শুধু তাই নয় তার আস্তানায় মাদক সেবন ও মাদক বিক্রি হচ্ছে । এর কারনে সমাজের যুবকরা কুসংস্কার ও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই ভন্ড পীর আসেদ চাঁন ফকিরের আস্তানা উচ্ছেদ ও তার কার্যকলাপ বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি।
এ ঘটনা অস্বীকার করে আসেদ চাঁন ফকির পাগলার বড় ভাই খোরশেদ আলম বলেন, আমরা মুসলমান। ইসলাম বিরোধী কোন কাজ করি না। এলাকার এক শ্রেণির লোক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আমাদের মাজার শরীফে সেজদা দেয়া নিষেধ। তাছাড়া এখানে খারাপ কোন কার্যকলাপ হয় না।
জাজিরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল সরকার বলেন, যারা উপজেলায় আসছিল তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে আসেদ চাঁন ফকির পালিয়েছে। ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ যেই করুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।