ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাগড়াছড়িতে কার্পজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক তিনদিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ শুরু

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক,  খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়িতে স্থানীয় মৎস্যজীবী ও আগ্রহী যুব সমাজকে আধুনিক মৎস্যচাষে দক্ষ করে তুলতে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপি “কার্পজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।

 

মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (২০২৪-২০২৫ অর্থ বছর) এর আওতায় আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে খাগড়াছড়ি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরের আয়োজনে জেলা সদরের মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার প্রশিক্ষণ কক্ষে প্রশিক্ষণটির শুভ উদ্বোধন করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. রাজু আহমেদ।

 

প্রশিক্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ২০ জন মৎস্যজীবী এবং ভবিষ্যতে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনে আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা অংশ করেছেন। ।

 

আধুনিক চাষাবাদের দিকে এগিয়ে যাত্রার লক্ষ্যে পুকুর প্রস্তুতির আধুনিক কৌশল, বিভিন্ন প্রজাতির কার্প মাছ যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প ইত্যাদির মিশ্রচাষ পদ্ধতি, উপযুক্ত খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের শেখানো হচ্ছে।

 

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক শরৎ কুমার ত্রিপুরা এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদৃষ্টি চাকমা ও দীঘিনালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অবর্ণা চাকমা প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে সুত্র জানায়।

 

 

সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদৃষ্টি চাকমা বলেন, এই প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় মৎস্যচাষিদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ ও টেকসই মৎস্যচাষে উৎসাহিত করা।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক শরৎ কুমার ত্রিপুরা বলেন, কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ একটি লাভজনক ও পরিবেশ গত ভাবে ভারসাম্য পূর্ণ মডেল। পার্বত্য এলাকার সম্ভাবনাময় জলাশয়গুলো কাজে লাগিয়ে আমরা মৎস্যখাতকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারি।”

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদ বলেন,এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত সকল মৎস্যচাষি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। কার্পজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ পদ্ধতি আমাদের জেলায় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির একটি কার্যকর মাধ্যম। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ, সঠিক খাবার ব্যবস্থাপনা এবং জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আমরা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারব। মৎস্য বিভাগ সবসময় আপনাদের পাশে রয়েছে, যেন আপনারা আধুনিক ও টেকসই চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণই এ উদ্যোগকে সফল করবে।”

 

 

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া এক তরুণ মৎস্যচাষি জানান, “আমি আগে শুধু এক-দুই প্রজাতির মাছ চাষ করতাম। এখানে এসে শিখছি কিভাবে একসাথে কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ করলে মুনাফা বাড়ে, এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে।”

 

উল্লেখ্য, পাহাড়ি অঞ্চলে সীমিত ভূমি ও পানির উৎসের মধ্যে থেকেও সঠিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি ও মৎস্য খাতকে আরও কার্যকর ও টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব। এই ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবিকায় বৈচিত্র্য আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

তিনদিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ বা প্রণোদনা কার্যক্রমও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।


error: Content is protected !!