
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: নড়িয়ার দূর্গম পদ্মার চরে সাবমেরিন ক্যাবলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ! পাচ্ছে বিদ্যুৎ, পূরণ হচ্ছে স্বপ্ন-খুশি চরাঞ্চলের মানুষ! সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে শরীয়তপুরের নড়িয়ার মূলভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ দূর্গম পদ্মার চরের তিনটি ইউনিয়নে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ। প্রশাসনিক আদেশের পরই বিদ্যুতায়নের জন্য কাজ করছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। চলতি মাসের ১৫ ফেব্রæয়ারী আগামীকাল শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করে বিদ্যুতের বাতি জ্বালানোর প্রস্তুতিও রয়েছে কর্তৃপক্ষের। শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারী এর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এছাড়া চরের মধ্যে একটি সাব স্টেশনও নিমার্ণ করা হয়েছে। এতে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা ও জাগিয়েছে আশার আলো।
সূত্রমতে, শরীয়তপুরের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চারপাশে পদ্মা মেঘনা বেষ্টিত ছোট বড় অসংখ্য চর। এসব চরে যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। নড়িয়া থেকে ট্রলার ছাড়লে ঐ পাড়ে গিয়ে পৌছাতে ২ ঘন্টারও বেশী সময় লেগে যায়। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এসব চরে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। অবহেলিত এই দূর্গম পদ্মার চরে বিদ্যুৎ আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি এসব এলাকার মানুষগুলো। এবার তাদের সেই না দেখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। জোড়েসোড়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা। এতে খুশি চরের মানুষ। স্বপ্ন দেখছে বিজলী বাতির আলোয় আলোকিত হবে তাদের ঘর ও চরাঞ্চল। বিদ্যুতের নানাবিধ সুবিধা পাওয়ার অপেক্ষায় তারা।
সড়ক ও জন পথ পেরিয়ে শরীয়তপুরের উত্তরে নড়িয়া বা ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার পাড়ে গিয়ে তাকালে আর কিছুই দেখা যায় না। চোখে পড়ে শুধু ধু-ধু কুয়াশায় ঢাকা আকাশ। মনে হয় এই বুঝি পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। কিন্তু না, এরই উত্তরে রয়েছে, শরীয়তপুর হতে বিচ্ছিন্ন ভূ-খন্ড দূর্গম গহিন পদ্মার চর। চার পাশে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ঘেরা, মাঝখানে ছোট-বড় অসংখ্য চর। ৭০ বছরের বেশী সময় ধরে এসব এলাকায় মানুষের বসবাস। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এসব চরে বিদ্যুতের আলো পৌছায়নি এখনও, আশাও করেননি এখানকার বাসিন্দারা। এবার সেই দূর্গম পদ্মার চরে নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া হচেছ। সরকারের এমন উদ্যোগে চরাঞ্চলের চোখে মুখে আনন্দের হাসি। নড়িয়ার উপজেলার নওপাড়া, চরআত্রা, জাজিরা উপজেলার কুন্ডের চর এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা এই চারটি ইউনিয়নের সেই দুর্গম পদ্মার চরেই পৌছবে বিদ্যুৎ, জ্বলবে বাতি আর আলোকিত হবে চরাঞ্চল। যা কখনো স্বপ্নেও চিন্তা করেনি এসব চরে বসবাসরত অবেহিলিত মানুষগুলো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ দূর্গম গহিন পদ্মার চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এই ¯েøাগানকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে-স্থানীয় সাংসদ পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এ’র প্রচেষ্টায় এমনি উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই পদ্মার দূর্গম চরে যে কোন মূল্যে বিদ্যুৎ পৌছাবে এটি ছিল তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি। ইতি মধ্যেই তিনি তাঁর প্রতিশ্রতি রক্ষা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাকে বাস্তবায়ন করতে দুর্গম সেই পদ্মার চরের অবেহেলিত মানুষের মাঝে বিদ্যুৎ পৌচেছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। ইতি মধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো: সিরাজুল ইসলাম জানায়, আমরা কখনো চিন্তাও করি নাই আমাদের এই চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসবে তাও আবার পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ তার সেই শ্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের এমপি ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ আমরা এই চরাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছি। বতর্মান যোগ আধুনিকতার যোগ আমরা এই আধুনিকতা থেকে বিরত ছিলাম এবং আইসিটি ক্লাস থেকে বঞ্চিত ছিলাম তা এখন বিদ্যুৎ আসার ফলে সে ক্লাসটিও করতে পারব। এছাড়া কম্পিউটার শিখতে পারবো। তাই মনে অনেক আনন্দ লাগছে।
ডা: তৌহিদ মুন্সী বলেন, আমরা পদ্মার এই দূর্গম চরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে বড় হয়েছি। আমাদের এ অঞ্চল নদী বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছর পলি পড়ে উর্বর হয় এসব জমি। তাই ফলনও হয় বাম্পার কিন্তু নেই হিমাগার ব্যবস্থা। তাই দুর্ভোগে পড়তে হয় কৃষকের। বোরো মৌসুমে এসব চরের কৃষককে নির্ভর করতে হয় ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের ওপর। চড়া মূল্যে কিনতে হয় ডিজেল। তাই লাভের মুখ দেখছেন না তারা। চরগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে সাত-আটটি জাহাজ নির্মাণের ডক ইয়ার্ড। এগুলোও ডিজেল চালিত জেনারেটর দিয়ে চলছে। সম্ভাবনাময় এ খাতটিও আশার আলো দেখছে না। এখন বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে এখানে গড়ে উঠবে আরো বৃহৎ ডক ইয়ার্ড সহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ঢাকা জোন (দক্ষিণ) এর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: জয়নাল আবেদীন, জানান, ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ যাচেছ শরীতপুরের পদ্মার দূর্গম চরাঞ্চলে। আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারী শনিবার ১০এমভিএ এ সাব স্টেশনটি মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম থেকে ৩০ কি.মি পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নড়িয়া উপজেলার দূর্গম পদ্মা চরের নওপাড়া ও চরআত্রা এই দুইটি ইউনিয়নে প্রথম ধাপে ১ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছি। এর উদ্বোধন করবেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি। পর্যায়ক্রমে বাকি যে ইউনিয়ন দুটি রয়েছে ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা ও জাজিরার কুন্ডেরচর সেখানেও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারব। এছাড়া নওপাড়াতে আমাদের একটি সাবস্টেশনের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে এই সাবস্টেশনের কাজ শেষ হবে। তখন এখান থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
স্থানীয় সাংসদ বর্তমান পানি উপ-মন্ত্রী এ.কে.এম. এনামুল হক শামীম বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে ওই চরাঞ্চলগুলোতে গণসংযোগে গেলে তখন স্থানীয় লোকজন আমার কাছে বিদ্যুতের দাবী জানায়, আমিও তখন কথা দিয়েছিলাম যে কোন মূল্যে এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবো। তবে বাস্তবায়নের বিষয় ছিলো সন্দিহান, কিন্তু নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে তিনদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সেখানে বিদ্যুতের খুটি পাঠাতে পেরেছিলাম। এসব এলাকার চতুর দিকে নদী হওয়ায় খুটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ নেয়া সম্ভব না তাই সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এখন সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করি আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারী আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করে বিদ্যুতের বাতি জ্বালাতে পারবো। আজ আমার কাছে এত ভাল লাগছে এই ভেবে যে, প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এ কথাকে বাস্তবায়ন করতে এসব এলাকার অবহেলিত মানুষগুলোকে যে স্বপ্ন আমি দেখিয়েছিলাম তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এজন্য মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছেও শুকরিয়াতান আদায় করছি-আলহামদুলিল্লাহ্ ।