নড়িয়া (শরীয়তপুর) প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সাধুর বাজার গত মঙ্গলবার বিকেলে নদী ভাঙ্গনের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কারো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধ্যানে নদীর পাড়ে আসা স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পদ্মা পাড়ের বাতাস।
নড়িয়া থানা পুলিশ, নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে তল্লাশি চালাচ্ছেন নৌ- পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ১০ ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে।
নিখোঁজরা হচ্ছেন নড়িয়া উপজেলার উত্তর কেদারপুর গ্রামের শাহজাহান বেপারী (৭০), মজিবুর রহমান ছৈয়াল (৪৫), গোপী বাছার (৫৫), কেদারপুর গ্রামের নাসির বয়াতী (১৮), মোশারফ চোকদার (৪৬), চাকধ গ্রামের নাসির হাওলাদার (৩৫), বাড়ইপাড়া গ্রামের কামাল উদ্দিন ছৈয়াল (৬২), দক্ষিণ চাকধ গ্রামের অন্তু মগদম (১৫), মোক্তারের চর গ্রামের আব্দুর রশিদ হাওলাদার (৩৬) ও বরিশাল নাজিরপুর বরইবুনিয়া গ্রামের আল আমিন (২৭)। এ সময় আহত হন প্রায় ২০ জন।
এদিকে নিখোঁজদের সন্ধানে নদীর পাড়ে ভিড় জমিয়েছেন স্বজনেরা। তাদের কান্না আর আহাজারি দেখে নীরবে চোখের পানি ফেলেন সাধারণ মানুষ।
নিখোঁজ শাহজাহান বেপারীর মেয়ে শাহনাজ বেগম বলেন, আমার বাবা একজন রিকশা চালক। সে দোকানপাট সরানোর কাজে সহায়তা করতে এসে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার কোনো সন্ধান পাইনি। আমার একটি বোন ও একটি ভাই প্রতিবন্ধী। আমরা কীকরে ওদের নিয়ে বাঁচব?
নিখোঁজ মজিবুর ছৈয়ালের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী গাছ কেনাবেচার ব্যবসা করেন। ভাঙ্গন এলাকার গাছ কেনার জন্য সে সাধুরবাজার এসেছিলেন। কিন্তু লঞ্চঘাট এলাকা ধ্বসে পড়ার পর থেকে আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না ।
নিখোঁজ নাছির বয়াতীর মা নাজমা বেগম ছেলের শোকে শুধুই বিলাপ করছিলেন। তিনি বলেন, ছেলেটা কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করতো। পেটের দায়ে নদীর পাড়ের ঘর ভাঙ্গার জন্য আসে, তারপর থেকে ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না।
নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, নিখোঁজের তালিকা দীর্ঘ হয়েছে। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী এখন ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ করতে পারছে না ডুবুরিরা। নৌকা-ট্রলার যোগে সন্ধান কাজ চলছে। আইনশৃংখলার কাজে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ১০ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার তৎপরতা চলমান আছে। ভাঙ্গন এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ নড়িয়ার কেদারপুর ইউনিয়নের সাধুর বাজার এলাকার বিশাল অংশ ধসে পড়ে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ৩টি দোকানঘরও এ সময় নদীতে তলিয়ে যায়। ঘটনার সময় সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন লোক ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।