ঢাকা, সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের বিশ্রাম কক্ষে কি হচ্ছে !

ইয়ানূর রহমান : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি কক্ষ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। যেটি দায়িত্বরত চিকিৎসকদের বিনোদনের কক্ষ হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ উঠেছে, দুইজন ডাক্তারের কারণে কক্ষটি এখন মাদক সেবনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মেডিকেল অফিসার ডা. কাজল মল্লিক ও ডা. কল্লোল কুমার সাহা ওই কক্ষে বসে মাদক সেবন করছেন প্রকাশ্যে। দায়িত্ব না থাকলেও তারা ওই কক্ষে আড্ডায় লিপ্ত থাকেন। যখন তখন সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারেননা। আবার দায়িত্ব পালনকালেও মাদক সেবন করে ওই দুই চিকিৎসক প্রায় রোগী ও স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করছেন। কর্মস্থলে বসে তাদের মাদক সেবনের বিষয়টি এখন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক যেখানে বসে দায়িত্ব পালন করেন তার পিছনেই অবস্থিত আলোচিত ওই কক্ষটি। কক্ষে ঢোকার আগ মুহুর্তেই রয়েছে নীল কাপড়ের পর্দা। কক্ষের ভিতর আছে দুইটি বিছানা, একটি টেলিভিশন ও এসি। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের বিনোদন ও বিশ্রামের জন্য কক্ষটি তৈরি করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুই জন চিকিৎসকের যথেচ্ছার কারণে কক্ষটি এখন বেশ আলোচিত।

অভিযোগ উঠেছে, ডা. কাজল মল্লিক ও ডা. কল্লোল কুমার সাহা কক্ষটি নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জরুরি বিভাগের একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, ওই কক্ষটি এখন মাদক সেবনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ডা. কাজল মল্লিক ও ডা. কল্লোল কুমার সাহা সেখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। তাদের কাছে মাদক সরবরাহ করেন ওষুধ কোম্পানির দুইজন প্রতিনিধি। তিনি অবশ্য তাদের নাম বলে পারেননি।

ওই কর্মচারী আরো জানান, দুই জনের মধ্যে যে কোন একজনের দায়িত্ব থাকলেই তাদের এক সাথে দেখা মেলে ওই কক্ষে। দায়িত্ব না থাকলেও অন্য জন নেশার টানে ছুটে আসেন সেখানে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে আড্ডায় বসে সময় কাটান। আড্ডায় অংশ নেন কয়েকজন বহিরাগতও।

আরেক কর্মচারী জানান, ওই দুই চিকিৎসক অধিকাংশ সময় নেশার ঘোরে থাকেন। যে কারণে জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী ও স্বজনেরা তাদের রোষানলে পড়ে দুর্ব্যহারের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরো জানান, জরুরি বিভাগে তাদের মধ্যে কারো একজনের দায়িত্ব থাকলেই নির্দ্দিষ্ট চেয়ারে বসেন না । চলে যান আলোচিত ওই কক্ষে। রোগী আসার পর ডাকতে গেলেই অধিকাংশ সময় তাদের উপরও রেগে যান।

সূত্রের দাবি, ডা. কাজল মল্লিক ও কল্লোল কুমার সাহাকে জরুরি বিভাগ থেকে দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নেয়া হোক। অন্যথায় ওই কক্ষে মাদক সেবন করা কিছুতেই বন্ধ হবেনা ।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটুর সাথে। তিরি জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের বিশ্রাম কক্ষে অনৈতিকতার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। গোপনে খোঁজও নিচ্ছেন। এছাড়া অভিযুক্ত দুই মেডিকেল অফিসার সতর্ক করা হয়েছে। তাদের বিতর্কিত কর্মকান্ড সম্পর্কে চিকিৎসক নেতৃবৃন্দকেও অবগত করা হয়েছে। সংশোধন না হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২৬ মে বিকেলে রোগী ভর্তি করতে এসে ডা. কাজল মল্লিকের মারমুখি আচরণের শিকার হন গণপূর্ত বিভাগ যশোর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন। তিনি অভিযোগ করেন রোগী ভর্তি করতে নারাজ হওয়া ডা.কাজল মল্লিক আরেক মেডিকেল অফিসার কল্লোল কুমার সাহার সাথে বিনোদন কক্ষে সময় কাটাচ্ছিলেন। তিনি ডাক্তারকে অনুরোধ করতে ওই কক্ষের দরজা খুলে দেখতে পান সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে। নেশার ঘোরে রয়েছেন ডা. কাজল মল্লিক ও ডা. কল্লোল কুমার সাহা। দুইজনই যেন ঢুলে পড়ছেন। এই ঘটনার পরেই ওই দুই চিকিৎসক এবং ওই কক্ষটি নিয়ে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের মাঝে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে।


error: Content is protected !!