ঢাকা, সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমি দল ও রাষ্ট্রের কাজে ব্যস্ত থাকলেও মনটা পড়ে থাকে নড়িয়ায়!…পানিসম্পদ উপমন্ত্রী

মো: ইব্রাহীম হোসাইন: গতকাল মঙ্গলবার শরীয়তপুরের নড়িয়ার পদ্মার ডান তীর রক্ষা বেড়িবাঁধ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ. কে. এম. এনামুল হক শামীম এমপি। তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও ছুটে আসেন পাদ্মা পাড়ের মানুষের কাছে। পায়ে হেটে নিজ চোখে দেখেন কাজের অগ্রগতি এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন অসহায় মানুষ গুলোর। তাঁদের দু:খ লাগবেই করা হচেছ বেড়িবাঁধ। এ সময় তিনি বলেন, আমি দল ও রাষ্ট্রের কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমার মনটা পড়ে থাকে নড়িয়ায়! আমি ঘুমালেও কানটা স্বজাগ রাখি নড়িয়ার মানুষের কথা শোনার জন্য! আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করছিনা বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

শরীয়তপুরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত প্রাণের দাবী ছিলো এই বেড়িবাঁধ। আজ সেই বহুল প্রত্যাশিত প্রাণের চাওয়া বেড়িবাঁধের বাস্তবায়ন দেখে খুশি পাদ্মা পাড়ের মানুষ। বিগত প্রায় ৭০ বছর যাবৎ একটু একটু করে নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছিল শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা ‍উপজেলার এসব এলাকা। তা রক্ষায় বিতগ দিনগুলোতে নেয়া হয়নি তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। বেঙ্গল গ্রুপের সু-দক্ষতা ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সু-পরিকল্পনায় কাজের অগ্রগতিতে খুশি পদ্মা পাড়ের মানুষ। তবে নড়িয়া বাঁচাতে ড্রেজিং করে পদ্মার মাঝ নদীর চর কেটে দ্রুত নদীর গতিপথ পরিবর্তনের বিকল্প নেই, বলছেন স্থানীয়রা।

আসছে বর্ষা, বাড়ছে আতঙ্ক! ঘুব নেই পদ্মা পাড়ের মানুষের। গতবারের পদ্মার সেই নির্মম ভয়াল থাবার  কথা শুনলে এখনও শরীর সিউরে উঠে পদ্মা পাড়ের মানুষের। কিছুদিন বাদে আবার আসছে বর্ষা! আবারও কি ভাঙবে নড়িয়া? পাল্টে যাবে নড়িয়ার মানচিত্র এমন প্রশ্নও নারা দেয় অনেকের মনে। তবে বেঙ্গলগ্রুপের সুদক্ষতায় বেড়িবাঁধ কাজের অগ্রতি দেখে আশায় বুক বাধেছেন এখানকার পদ্মা পাড়ের মানুষ।

গতবছরের ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলো শরীয়তপুরের পদ্মা পাড়ের মানুষ। সর্বকালের ভয়াবহ নদী ভাঙনে লন্ড-ভন্ড হয়েছিল নড়িয়া। সেই নির্মম নিশংসতার কথা ভুলে যায়নি তারা। তবে এ বছর বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কাজের অগ্রগতি দেখে অনেকটা আশায় বুক বেধেছেন পদ্মা পাড়ের এই অসহায় মানুষগুলো। এদিকে শরীয়তপুর বাসীকে পদ্মার ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়ানো হয়েছে কাজের গতি এবং সর্বোচ্চ দ্রুত গতিতে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন বেরিবাদের কাজে নিয়োজিত বেঙ্গল গ্রুপ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

বিগত দিনের পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনের কবলে মুলফতগঞ্জ ও সুরেশ্বর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে পদ্মার মাঝ নদীতে পড়েছে বিশাল চর। ভাঙ্গন এলাকায় পুর্ব-পশ্চিমের নদীর প্রবাহ উত্তর-দক্ষিনে প্রবাহিত হওয়ায় বদলে গিয়েছিল নদীর গতিপথ। ড্রেজিং করে পরিবর্তন করা হচেছ নদীর গতিপথ। যার ফলে এবছর নদী তীব্রতা কম হবে বলে মনে করছেন, সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সে বিষয়টি মাথায় রেখেই দ্রæত গতিতে কাজ করছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রæপ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৮.৯ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ নির্মাণ কাজের এরই মধ্যে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডামপিং শেষ করেছে ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে টার্গেটের আটাশ লাখ জিও ব্যাগের সাড়ে বাইশ লাখ  জিও ব্যাগ ডামপিং করা হয়ে গেছে। বাকী সাড়ে পাঁচ লাখ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাসেই শেষ করতে পারব। ব্লগ ডামপিং হয়েছে ১৪ হাজার এবং প্রস্তুত বা তৈরি আছে ৮০ হাজার। এমনটাই জানিয়েছেন, শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার।

তবে কাজের অগ্রগতি দেখে খুশি পদ্মা পাড়ের মানুষ। তারা আশা করছেন কাজের গতি যেভাবে বাড়িয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ তাতে হয়তো এ বছর নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এখানকার মানুষের প্রাণের দাবি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত গতিতে ড্রেজিং করে পরিবর্তন করা হোক নদীর গতিপথ, আল্লাহ্ চায়তো তাতেই হতে পারে আমাদের শেষ রক্ষা। তা না হলে কিছুটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে তাদের মনে। আসছে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভয়াল থাবা থেকে নড়িয়া বাসীকে রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে সর্বোচ্চ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুরে পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ…

গত বছরের ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের নির্মমতা মনে পড়লে এখনো শরীর শিউরে ওঠে ভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলোর। কিছুতেই ভুলতে পারছে না সেই নির্মম স্মৃতি, ক্ষণে ক্ষণে এখনো মনে পরে স্বপ্নে গড়া সেই বাড়িঘর, পিতৃ স্থল এবং হারিয়ে ফেলা বাবা-মায়ের কবর গুলোর  কথা। ইচ্ছে করলেই আর পারছে না বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত করে তাদের জন্য দোয়া করতে। তবুও কাজের অগ্রগতি দেখে খুশি মনেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সাংসদ পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে ধন্যবাদ জানান তারা। পদ্মা পাড়ের সাধারণ মানুষ।

মো. ইব্রাহীম হোসাইন, সম্পাদক-ভোরের সংবাদ, আরটিভি শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি, ভোরের কাগজ-নড়িয়া উপজেলা প্রতিনিধি।


error: Content is protected !!