
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এই দুর্নীতি অপসারণ আমাদেরই করতে হবে। তা না হলে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি খারাপ পৃথিবী রেখে যাব। সেটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় হবে।
রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানি শেষে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে নীলফামারী সদর উপজেলার সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩১টি দপ্তরের ৮১টি অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ স্ব-স্ব অভিযোগের বিষয়ে জবাবদিহি করেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কি না। কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ যদি আমাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে তাহলে আমরা খুব সন্তুষ্ট থাকি তাদের ওপর। আমরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের ঘৃণা করতে না শিখি তাহলে আমাদের এই সংকট টা সহজে যাবে না। আপনারা শুরু করুন আমরা দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলবো তাহলে একটা সময় দেখবেন আমরা ভালো একটা রেজাল্ট পেয়েছি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি এমনও দেখেছি বাবা খুবই ভালো সুফি মানুষ কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত একজন ব্যক্তির সাথে। এরকম যদি হয় তাহলে খারাপ ভালো মিলে এমন একটা অবস্থা হয়ে যাবে আমরা কাকে রেখে কাকে বাদ দেব সেটি খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে। আমাদের কাজগুলো ব্যক্তিগত কাজ না প্রাতিষ্ঠানিক কাজ প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করেনতাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে কেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় নীলফামারীতে দুর্নীতির সংখ্যা অনেক কম আমরা যদি ঢাকার দিকে তাকাই তাহলে এটির সংখ্যা অনেক বেশি। যেখানে দুর্নীতির প্রকোপ কম সেই জেলাকে মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আশা করবো একসময় আপনারাই ঘোষণা করবেন নীলফামারী হচ্ছে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা। একেবারে যদি সম্ভব না হয় আমরা যাতে ওই দিকে আগাতে সেই সহযোগিতা করবেন সকলে। এতে আমাদের যা যা করণীয় আমরা সব কিছু করতে প্রস্তুত।
সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রায় আমাকেও শুনতে হয় আপনারা তো দুর্নীতির কথা বলেন কিন্তু আপনার অফিসই তো দুর্নীতিগ্রস্ত। এটি কিন্তু একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয় না। আমিও সেটি এড়িয়ে যাই না, আমাদের যে জায়গায় দুর্নীতি হয় সেটি আমাদের দেখিয়ে দিবেন আমরা চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব সকলের সাথে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনে যদি দুর্নীতি করে তাহলে বাকিদের জন্য তো আর বলার কিছু থাকে না।
অর্ন্তবতী সরকার প্রধানের কথা তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, সরকার প্রধান মনে করেন আমাদের যে কর্মপদ্ধতি রয়েছে সেটির মধ্যে সামান্য ভ্রান্তি রয়েছে সেটি হলো আমরা যে সময়টা ব্যয় করি সেটি হচ্ছে পুরোনো দুর্নীতির জন্য, পুরোনো দুর্নীতি কীভাবে নিরসন করা যায়। আমাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয় সেটি নিয়ে কাজ করা। কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয় আমরা সকলে জানি, যেহেতু জেনেই থাকি তাহলে ভবিষ্যৎ সর্তকের জন্য কেন সেগুলো নিয়ে কাজ করছি না।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিজ্ঞা মুহাম্মদ আকবার আলী আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহসিন সহ দুদকের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক তালেবুর রহমান প্রমুখ।