ঢাকা, বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঢাকা, বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রুকু-সেজদায় ধীরস্থিরতা গুরুত্বপূর্ণ যে কারণে

নামাজ হলো মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সাক্ষাৎ। হাদিসে এসেছে, ‘মুমিন যখন নামাজে থাকে সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি: ৪১৩) তাই নামাজে তাড়াহুড়া করা সমীচীন নয়। আবশ্যক হলো- কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজ আদায় করা। রুকু শেষে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও দুই সেজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসার কঠিন নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘এক সাহাবি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদের এক কোনায় অবস্থান করছিলেন। সাহাবি এসে তাঁকে সালাম দিলেন। নবীজি (স.) তাকে বললেন, যাও তুমি আবার নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। সাহাবি ফিরে গেলেন এবং নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর নবীজি (স.)-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন, তোমার প্রতিও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। তৃতীয়বার সাহাবি বললেন, আমাকে অবগত করুন।

তখন নবীজি (স.) বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তার আগে ভালোভাবে অজু করবে। অতঃপর কেবলার দিকে ফিরবে এবং তাকবির দেবে। কোরআনের যতটুকু তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা পাঠ করবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে বসবে। আবার ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পুরো নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি: ৬৬৬৭)

নামাজ কীভাবে সুন্দর  হয়, তারই এক চমৎকার উপস্থাপনা করা হয়েছে এই হাদিসে। অনেক মুসল্লি রুকু-সেজদায় ধীরস্থিরতার ব্যাপারে অবহেলা করে থাকেন। ফলে নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী তার নামাজ হয় না। যারা রুকু-সেজদা যথাযথভাবে আদায় করে না, তাদের চোর আখ্যা দিয়েছেন নবীজি (স.)। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজ চুরি করে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কীভাবে নামাজ চুরি করে? তিনি বলেন, সে নামাজে রুকু ও সিজদা পূর্ণ করে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৬৯৫)

নামাজের ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা নবীজি (স.) একদিকে নামাজের বিধানগুলো ধীরস্থিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকে ধীরস্থিরতা অবলম্বন না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন। নবীজির ইরশাদ- ‘কোনো ব্যক্তি যে পর্যন্ত না রুকু-সেজদায় তার পৃষ্ঠদেশ সোজা করবে, সে পর্যন্ত তার সালাত যথার্থ হবে না।’ (আবু দাউদ: ৮৫৫; মেশকাত: ৮৭৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি ঠোকর মেরে রুকু-সেজদা করছিল, রাসুলুল্লাহ (স.) তা দেখে সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা কি এ লোকটিকে লক্ষ্য করেছ? এভাবে সালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, সে মুহাম্মদের মিল্লাত ছাড়া অন্য মিল্লাতে মারা যাবে। কাক যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার সালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকু করে আর সেজদায় গিয়ে ঠোকর মারে তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশি খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা মিটাতে পারে?’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা: ৬৬৫; আলবানি, ছিফাতু সালাতিন নাবী, পৃ-১৩১)


error: Content is protected !!