
স্টাফ রিপোর্টার , খাগড়াছড়ি :
কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৮ বছর পূতি উপলক্ষে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে পাহাড়ের ৩ সংগঠন।
৮ জুন ২০২৪, শনিবার সকাল ১১টায় “অপহরণের ২৮ বছর : কল্পনা চাকমার সন্ধান চাই, অপরাধীদের সাজা দাও। দায়মুক্তির রায় মানি না, মানব না।” শ্লোগানে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার সালেহ আহমেদ ও নুরুল হককে জনতার আদালতে প্রতীকী ফাঁসি প্রদান, মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ের লড়াইকারী তিন সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ,পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কর্মসুচি শুরু হয়। মিছিলটি লোগাং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাবুড়া পাড়া বাজার হয়ে সিমান্ত সড়ক মোড়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ পানছড়ি উপজেলা শাখা নেত্রী পরিমিতা চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ প্রতিনিধি বকুল চাকমা, ডিওয়াইএফ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পানছড়ি উপজেলা শাখা সভাপতি রিপন ত্রিপুরা, পিসিপি উপজেলা শাখা সভাপতি সুনিল ময় চাকমা, সঞ্চালনায় ও বক্তব্যে নারী সংঘ নেত্রী মানেক পুতি চাকমা প্রমুখ ।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন দিবাগত রাতে বাঘাইছড়ি উপজেলার কজইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের লে. ফেরদৌস ও ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার সালেহ আহমেদ ও নুরুল হকের নেতৃত্বে তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়। সে সময় কজইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের লে. ফেরদৌস ও ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার সালেহ আহমেদ ও নুরুল হকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও আজ পর্যন্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়নি। অপহরণের ২৮ বছর হলেও প্রশাসন অপরাধীদের গ্রেফতার করতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু তাই নয়, কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ করে দিতে প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠেছে।
কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সমর, সুকেশ, মনতোষ ও রুপনকে গুম করা হয়। অনেকে জেল জুলুমের শিকার হন। তবুও সরকার প্রকৃত অপরাধীদের মামলা থেকে দায়মুক্তি দিতে মামলাটি বানচাল করে দিতে চায়।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলায় পুলিশের দায়ের করা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বাদী কালিন্দী কুমার চাকমার করা নারাজি আবেদনের ওপর গত বছর (১৩ আগস্ট ২০২৩) রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে আদেশ দেননি আদালত। অপরাধীদের আদালতে হাজির করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সরকার খুনী ও অপহরণকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। অপহরণ নির্যাতন করে জুম্মদের আন্দোলন দমানো যাবেনা। রাজপথে লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে।
সমাবেশের বক্তব্য শেষে প্রতীকী জনতার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতের বিচারক হিসেবে বিচারকার্য পরিচালন করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা। এ সময় আইনজীবীর ভূমিকা পালন করেন বকুল চাকমা ও মামলার বাদী ও ঘটনার সাক্ষী হিসেবে কালিন্দী কুমার চাকমার ভূমিকা পালন করেন পিংকু চাকমা। বিচার চলাকালে জনতা কল্পনা অপহরণকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই বলে তুমুল শ্লোগান দেন।
এ সময় বিচারক সাক্ষীর জবানবন্দি শোনার পর অপহরণ ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে কল্পনা চাকমার অপহরণকারী হিসেবে লে. ফেরদৌস, ভিডিপি প্লাটুন কমাণ্ডার সালেহ আহমেদ ও ভিডিপি সদস্য নুরুল হককে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাদের সকলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ জারি করেন। এ সময় উপস্থিত সকলে হাততালি দিয়ে রায়ের প্রতি সমর্থন জানান।
জনতার আদালতের রায়ে লে. ফেরদৌস, ভিডিপির প্লাটুন কমান্ডার সালেহ আহমদ ও সদস্য নুরুল হক যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে জোরপূর্বক অপহরণ করেছে তা সুস্পষ্টভাবে ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই পাহাড়িদের রীতি অনুযায়ী মানুষের মৃত্যুর পর যেভাবে ঢোল বাঁজানো হয় প্রতীকী হিসেবে সেভাবে ঢোল বাজিয়ে জনতা কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, সালেহ আহম্মেদ ও নুরুল হককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন।